স্টাফ রিপোর্টার ঃ তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের লাউড়েরগড় বাজারের যথাযথ উন্নয়ন নেই। তাহিরপুর সীমান্তের পর্যটনস্পট গুলোর দুয়ারে থাকা এই বাজারের পরিচিতি দেশ বিদেশে এখন ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকার সুনাম বৃদ্ধিতে বাজারের যথাযথ উন্নয়নের দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, দেশ স্বাধীনের পর কয়েকটি দোকান থেকে ক্রমান্বয়ে দোকান ঘর বাড়তে থাকে। দীর্ঘদিনে এই বাজারের প্রসার ঘটেছে। বাজারের ভেতরে গলি রয়েছে ৭ টি। কয়েক বছরে প্রায় ২ শ’ দোকান ঘর গড়ে উঠেছে বাজারে। সপ্তাহের মঙ্গলবার ও শুক্রবার হাটবার। এই দুইদিন বাজারে মালামাল বেশি আসে। বিভিন্ন এলাকার ক্রেতা বিক্রেতার আগমনে বাজার জমজমাট হয়ে উঠে। কিন্তু বাজারের ভেতরে গলিতে কোনো পাকা রাস্তা নেই। বৃষ্টি হলেই পানি জমে কাদা সৃষ্টি হয়। এতে বাজারে আসা মানুষেরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
আগে থেকেই লাউড় রাজ্যের নামানুসারে পরিচয় বহন করে আসছে লাউড়েরগড় বাজার। শাহ আরেফিন (রহ.) আস্তানা, বারুনি মেলা, বারেকের টিলা, যাদুকাটা নদী, শিমুলবাগসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে এই বাজারের উপর দিয়ে বেশিরভাগ পর্যটক আসা যাওয়া করেন। এছাড়া ট্যাকেরঘাট, নীলাদ্রি, টাঙ্গুয়া আসা যাওয়ার অন্যতম সহজ মাধ্যম এই লাউড়েরগড় বাজার সড়ক। এই কারণে পর্যটক বাজারের পরিণত হয়েছে লাউড়েরগড় বাজার। এখন পরিচিতি বেড়েছে দেশ-বিদেশে। কিন্তু বাজারে প্রবেশ পথ ও গলিপথের পাকাকরণ না থাকায় মানুষজন চলাচলে ভোগান্তির শিকার হতে হয় প্রতিনিয়ত। দোকানপাট অনেকটা অনুন্নত থাকায় পর্যটকদের বসার উপযুক্ত স্থান নেই, রুচিসম্মত খাবারের সুব্যবস্থা নেই।
ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান বলেন, বর্ষায় বৃষ্টি দিলে বাজারের বিভিন্ন গলি পথ কাদায় পরিণত হয়। গলিজুড়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। যান চলাচলে ছিটকে পড়ে কাদা পাশের দোকানঘরে ও মানুষের উপরে। শুকনো মওসুমে যানবাহন চলাচলে ধুলাবালি উড়ে পরিবেশ নষ্ট হয়। এই জন্য বাজারের ভেতরে সকল গলি পথের পাকাকরণ জরুরি প্রয়োজন।
অপর ব্যবসায়ী সাকিল হোসেন বলেন, লাউড়েরগড় বাজারের গলি পথে কাদা হলে ব্যবসায়ীদের দোকানপাটে ও পথচারীদের গায়ে ছিটকে পড়ে। যানবাহন চলাচলে মানুষজনের জামা-কাপড় নষ্ট হয়।
মালেক মিয়া বলেন, লাউড়েরগড় বাজারে আসা মানুষজনের ভোগান্তি কমিয়ে আনতে অবশ্যই বিভিন্ন গলি পথ পাকাকরণ করা উচিৎ।
কাবিরুল ইসলাম বলেন, বাজার উন্নয়নে সকলের আন্তরিকতা দরকার। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে পর্যটকদের স্বাধীন চলাফেরা ও বসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সরকারীভাবে বাজার উন্নয়নের ব্যবস্থা করার দাবি আমাদের।
বাজারে আসা ক্রেতা আমিনুল ইসলাম, আব্দুশ শহিদ ও রূপা মিয়া বলেন, সপ্তাহের প্রতিদিন এই লাউড়েরগড় বাজারে পর্যটকেরা আসা-যাওয়া করেন। তাদের রুচিসম্মত খাবার পাওয়া যায় না। এমনকি ভাল অবস্থানে বসারও স্থান নেই। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এই বাজার। বাজারে একটি আধুনিক মানের ওয়াস ব্লক দরকার। সর্বোপরি বাজারের যথাযথ উন্নয়ন জরুরি প্রয়োজন।
বাদাঘাট উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান আপ্তাব উদ্দিন বলেন, লাউড়েরগড় বাজার অতি পুরাতন। এই বাজার ইজারা হয় না। তবুও আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য বাজারের উন্নয়ন করেছি। দিনে দিনে পর্যটক বাজারে পরিণত হচ্ছে এটি। পর্যটকদের স্টপেজের স্থান হয়েছে এখন এই বাজার। এতে ব্যবসাও জমে উঠেছে। বাজারের প্রবেশ পথ ও গলি পথের উন্নয়ন জরুরি প্রয়োজন। এলাকার পরিচিতি ও সুনাম ধরে রাখতে বাজারকে ঘিরে যত উন্নয়ন সবই করা উচিৎ।
লেখক ও কলামিষ্ট অ্যাড. হোসেন তওফিক চৌধুরী বলেন, এই এলাকায় আমাদের বাড়ি আছে। প্রাচীনকালে লাউড়েরগড় ছোট্ট একটি গ্রাম ছিল। বহু আগে ২/১টি ভাসমান দোকান থেকে এখন বিশাল বাজারে পরিণত হয়েছে। বাজারের সঠিক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে এলাকার মানুষের জীবন জীবীকার উন্নয়ন হবে। প্রতিদিন এই বাজারের উপর দিয়ে দেশ বিদেশের পর্যটকেরা যাচ্ছেন উপজেলার বিভিন্ন স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে। আমাদের এলাকার ছড়িয়ে পড়া সুনাম আরও বিস্তৃতি ঘটাতে অবশ্যই বাজার ও এলাকার রাস্তাঘাটের এবং দোকানপাটের উন্নয়ন করতে হবে।
কমেন্ট করুন